যে বীজ বপন করা হয়েছিল মহিরু হতেই সে সূর্যের আলো দেখতে পায়নি বলেই শ্যাওলা পড়া স্যাঁতস্যাঁতে আস্তাকুঁড় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি বলেই আজ বিশেষ শব্দে বিশেষায়িত করা হয়েছে তাদের। সেই বিশেষ শব্দের কারণে সমাজের মূল স্রোত থেকেই দূরে কোথায় মিলিয়ে যাওয়ার মধ্যে যেই সমঝোতা,তাদের মিলিয়ে যাওয়ার মধ্যে যেই ত্যাগ তিতিক্ষা, তাদের মিলিয়ে যাবার মধ্যে যেই বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, তাদের মিলিয়ে যাবার মধ্যে ভাঙ্গা গড়ার খেলা। আমি আপনি বা আমরাই তো সেই জীবন গড়ার মূল স্রোতের রূপকার।
সহায় সম্বলহীন, সুবিধা বঞ্চিত শিশু যারা স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ সুবিধা পায় না তারাই পথ শিশু। যাদের মিষ্টি হাসির কোনে মলিনতা থাকে, যাদের নিষ্পাপ চাহুনিতে সংকা থাকে,যাদের উৎফুল্লতার মধ্যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতার প্রাপ্তি থাকে। আর এই সব কিছুকে মেনে নিয়ে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে তারাই পথশিশু।
সৃষ্টিকর্তার নিয়ম অনুযায়ী সৃষ্টির বিধান মতে পথশিশুরাও আমাদের মত মানুষ।তাদের ভাবনার ঘরে বারবার বসত করে রংবেরঙের পাখি। তারা বারবার জেগে উঠতে চাই দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া জীবন সংগ্রাম থেকে। তারা বাঁচতে চাই। তারা গুমোট জীবন ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাই সবুজের সজীবতায় আর নীলাভ আকাশের তলে।
তাদের বেড়ে ওঠার জন্য আমাদের মনুষ্যত্বের জাগরণ প্রয়োজন।এই বিকশিত জীবনই সমাজে বঞ্চিত পথ শিশুদের কে নিয়ে আসবে সমাজের মূল স্রোতধারায়। বেঁচে থাকবে সাহসের সাথে। পূর্ণ অধিকার এর সাথে। সর্বোপরি মর্যাদার সাথে।
সমাজের সংকীর্ণতা, প্রতিকূলতা ও বৈরী পরিবেশ কে ছাপিয়ে পথ শিশুদের কে সত্তিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন দরকার।আর এই লক্ষ্যে যাতে কুড়িতেই এরা ঝরে না পরে তাই আমাদের জাগ্রত সুশীলসমাজের প্রচেষ্টা ও মানসিক শক্তিকে আরও দৃঢ় করে তুলতে হবে।
বৈরিতা আছে বলেই তো জাগ্রত হওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা আছে বলেই তো জেগে ওঠার এত প্রয়াস।
আসুন আমাদের নিজেদের একান্ত আদরের শিশুটির মর্যাদার সমতুল্য করে তুলে কাছাকাছি নিয়ে আসি তাদের। তবেই ঘুচবে শ্রেণী বৈষম্য। বিনাস হবে সমাজে গড়ে ওঠা একটি মর্মান্তিক শ্রেণীর কলঙ্কময় অধ্যায়।
তাই পরিশেষে বলতে চাই-
” যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে”
আর এই একলা চলার দলেরাই একদিন হয়