ময়মনসিংহ বিডি নিউজ২৪:
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় প্রাণিসম্পদ খাতে চলমান করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী খামারিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়,উপজেলা প্রাণিসম্পাদ কার্যালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এলএসপির সদস্যদের যোগসাজসে প্রাপ্ত টাকার ২০% থেকে ৫০% টাকার চুক্তিতে অখামারি গরু নেই এমন ব্যক্তিরা প্রণোদনার টাকা পেলেও সকল শর্ত পূরণ করেও টাকা পাননি প্রকৃত খামারিরা।
এদিকে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে সোমবার বেলা এগারোটায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ খামারিরা ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে জড়ো হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন শেষে ক্ষুব্দ খামারিরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ঘেরাও করে রাখে।
মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচিতে তাদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনার রশীদ হীরা, পৌর মেয়র মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল, ওসি চান মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে খামারিরা তাদের ঘেরাও ও অবরোধ তুলে নেন।
উল্লেখ্য, করোনাকালীন সংকটে প্রাণিসম্পাদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) গাভী খামারিদের প্রণোদনার জন্য দুই ধাপে প্রায় দেড় হাজার খামারির অনুকূলে খামারি প্রতি ১০ হাজার টাাকা থেকে ২২ হাজার ৫‘শত টাকা হারে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সে টাকা পেতে আসল খামারিরা হয়েছেন বঞ্চিত। অপরদিকে খামারি না হয়েও নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেয়ার শর্তে প্রাণিসম্পদ অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে স্থানীয় দালাল, ও এলএসপি (লাইভ স্টক সার্ভিস প্রোভাইটর) এর মাধ্যমে ভুয়া নাম ও মোবাইল নম্বর তালিকাভুক্ত করে নামে-বেনামে টাকা হরিলুট করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও খামরিসহ ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ভয়ানক দুর্নীতির এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বানিয়াজান ইউনিয়নের খামারি আ: করিম ও ইদ্রিস আলী জানান,প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র খামারের গরুসহ ছবি এবং খরচ বাবদ এক হাজার করে টাকা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোক এসে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অফিসে যোগাযোগ করা হলে আরও চার হাজার টাকা না দিলে চূড়ান্ত তালিকায় নাম উঠবে না বলে জানানো হয়। টাকা পাওয়ার পর অবশিষ্ট টাকা দেয়ার কথা বলা হলেও আমাদেরকে প্রণোদনার টাকা দেয়া হয়নি। বলিভদ্র ইউনিয়নের ইসপিঞ্জারপুর গ্রামের খামারি রেনুকা ইয়াসমিন এবং বাঐজানের খালেদা বেগমের নিকট থেকে ২ হাজার করে টাকা নিলেও তাদেরকেও প্রণোদনা দেয়া হয়নি। এরকম মুশুদ্দি ইউনিনের খামারি বদিয়ার, সুলাইমান, আব্দুর রাজ্জাক, আজিজুল হক, জিন্না, ছোহরাব আলী, ফটিকসহ উপজেলার প্রকৃত শতশত খামারিরা এ প্রণোদনার টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অপরদিকে, আব্দুল আজিজ, হারুন, জিল্লুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, লিয়াকত, লাল মিয়াসহ শতশত অখামারি খামারি না হয়েও প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন।
ভুক্তভোগী খামরিগণ আরও দাবী করেন,প্রণোদনার টাকার অর্ধেক ছেড়ে দেয়ার শর্তে অখামারিগণ গরু না থাকলেও তালিকাভুক্ত হয়ে টাকা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে মুশুদ্দি দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি সমবায় সমিতির সভাপতি ছোহরাব আলী জানান,অখামারিরা প্রণোদনার টাকা পেলেও প্রকৃত খামারিরা রহস্যজনক কারণে প্রণোদনা টাকা পায়নি। তদন্ত করে প্রকৃত খামারিরা যাতে টাকা পায় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি দাবি জানান।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে এলএসপির সদস্যদের মাধ্যমে তালিকা করে উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার খামরিকে প্রণোদনার আওয়তায় আনা হয়েছে। গরু নেই এমন ব্যক্তি কিভাবে খামারি হয় এমন প্রশ্নের সদোত্তর না দিয়ে তিনি বলেন,আমরা তো দেড় হাজার লোকের বাড়ী-বাড়ী গিয়ে যাচাই করেতে পারি নাই। মাঠ পর্যায় থেকে এলএসপির মাধ্যমে যে তালিকা এসেছে সে মোতাবেক আমারদের হেড অফিস বিকাশ ও নগদে প্রণোদনা প্রদান করেছেন।
ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনার রশীদ হীরা জানান,উপজেলার কোন ইউপি চেয়ারম্যানকে এ প্রণোদনার ব্যাপরে জানানো হয়নি। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃত্ত না করার কারণে প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরকম অনিয়ম-দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোহম্মদ রানা মিয়া জানান, ধনবড়ী উপজেলায় ১৫২৬ জন খামারিকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিকাশ ও নগদে প্রণোদনার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এটি একটি মেগা প্রকল্প।এতে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ঢালাও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,কিছু অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। আমি এলএসপির সদস্যদের ডেকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছি এ সকল অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকৃত খামারিরা প্রণোদনার টাকা না পেয়ে অখামারিরা কিভাবে টাকা পেলেন তার কোন সদোত্তর তিনি দিতে পারেননি।
মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেব-উন-নাহার লীনা বকল,ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম,আকবর হোসেন,সুরুজ্জামান মিন্টু প্রমূখ।