Mymensingh Bd News24
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটকে মদদ দিচ্ছেন বিতর্কিত কয়েক নেতা। নষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের ভাবমূর্তি। এ নিয়ে ফুলবাড়িয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা, সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা চরমভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগকে নিয়ে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র বন্ধের আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। সচেতন মহল এখনই ষড়যন্ত্রকারীদের লাগাম টেনে ধরার পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যথায় বিএনপি-জামায়াত জোটের শক্তিশালী ঘাটি ফুলবাড়িয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিক্ষুব্ধরা জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতারা ফুলবাড়িয়ার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, এমপির জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং জনপ্রিয় কমিটির প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিক্ষুব্ধরা প্রশাসনের প্রতি চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। অভিযোগ করা হয়েছে, ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেক সরকার দলবল নিয়ে কেন্দ্রীয় এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নবনিযুক্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। তিনি সোমবার দৈনিক জাগ্রত বাংলা’কে একথা বলেন। প্রসঙ্গত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে স্থানীয় এমপির সুযোগ্য পুত্র ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় নেতা অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিমকে সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ হারুন অর রশিদকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পরই কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের জড়িয়ে শুরু হয় নানান ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার। এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এমপি কন্যা সালমাকে উস্কে দেয় চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীরা। অন্যদিকে অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলার জন্য আব্দুল মালেক সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নাই।
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সংবর্ধনা দিয়ে মতবিনিময় সভা করে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে এমপির নেতৃত্বে কমিটির নবনিযুক্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা এবং শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। কর্মসূচিগুলোয় স্থানীয় এমপিসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি প্রমাণ করে এই ২ নেতা ফুলবাড়িয়ায় কতটুকু জনপ্রিয়। তবুও ফুলবাড়িয়া আসনের এমপি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ মোসলেম উদ্দিন পরিবারের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীরা নীল নক্শা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নামেন। সূত্র মতে, অতিরিক্ত বয়স হওয়ার কারণে বর্তমান এমপি হয়তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। এক্ষেত্রে তার বড় ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনপ্রিয় নেতা অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম এবং মেয়ে দেড়যুগ থেকে সুখের সন্ধানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও নাগরিক, লেবার পার্টির সক্রিয় নেতা সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সেলিমা বেগম সালমা প্রার্থী হতে পারেন। ভাই-বোনের প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা, ভাইয়ের জনপ্রিয়তায় বোনের ঈর্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একাত্মতা ঘোষণা করে একেক করে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল প্রধান অতিথি ছিলেন। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল প্রধান বক্তা ছিলেন। ফুলবাড়িয়া আসনের এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ মোসলেম উদ্দিন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মারুফা আক্তার পপি ও রেমন্ড আরেং, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, গৌরীপুর আসনের এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ভালুকা আসনের এমপি কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু, গফরগাঁও আসনের এমপি ফাহ্মি গোলন্দাজ বাবেল, নান্দাইল আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন, মহিলা এমপি মনিরা সুলতানা মনি প্রমুখ।
সূত্র জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেক সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ এবং সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দেড়যুগ আগে থেকেই তিনি ফুলবাড়িয়াবাসীর কাছে ‘রহস্যজনক মানুষ’। তার শত কোটি টাকার রহস্য আজও অজানা। ২০০১ সালে এলাকায় ফিরে সম্পদ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মালেক সরকার বিপুল টাকা খরচ করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। জেলার নেতাদের মোটা অংক ভোগ দিয়ে ২০০৩ সালের নীল নক্শার কাউন্সিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। দলীয় প্রভাব বিস্তার করে ২ বার ফুলবাড়িয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মালেক সরকার আওয়ামী লীগে যোগদান করার পরই গ্রুপিং এবং চরম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করান। ত্যাগী নেতাদের সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব এবং নিজের দাম্ভিকতার মাত্রা বাড়িয়ে দেন। তার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী। জেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে দীর্ঘ ১৮ বছর সম্মেলন বন্ধ রাখেন। সূত্র মতে, স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত মালেক সরকার যুবক বয়সে এলাকা ছেড়ে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে পাড়ি জমান। তিনি ২০১৬ সালে ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ সরকারি করার দাবিতে চলা আন্দোলনে সরকারের বিপক্ষে কলকাঠি নাড়েন। ওই আন্দোলনে পুলিশ-জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পদদলিত এবং অসুস্থ হয়ে ১ শিক্ষকসহ ২ জন প্রাণ হারান। অন্যদিকে মালেক সরকারের বিরুদ্ধে ০১-০৩-২০২০ তারিখে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদের ২ ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৩ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একমত হয়ে অনাস্থা দেন। প্রাথমিক তদন্তের পর মতামত দিয়ে আবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিলো। অভিযোগ প্রমাণিত হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় তাকে সতর্ক করে দিয়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে তিনি ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে বরখাস্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। এরই মধ্যে তিনি পদত্যাগ করে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পরই ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সাথে নানান কারণে তার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যানরা তার বিরুদ্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য, তহবিল তছরুপ, আত্মসাত, উন্নয়ন কাজে বাধা, ভবন ভেঙ্গে অফিস কক্ষ বর্ধিত, চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কমিটির কাছ থেকে ঘুষ দাবি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং কথায় কথায় অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগ আনেন।