MYMENSINGH BD NEWS24 :
নির্যাতনের শিকার চালকল শ্রমিক সামিউল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সরকার অটো রাইস মিল মালিকের ছেলে শরিফ মিয়ার নেতৃত্বে শ্রমিক সামিউল ওপর নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার সকালে মিলের ম্যানেজার এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত সামিউল ইসলাম (২৬) শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বনকালী গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে। প্রায় এক যুগ আগে ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা আকন্দপাড়া গ্রামের মমিন মণ্ডলের মেয়ে সাথী আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস শুরু করেন। তাদের দুই সন্তান সোহান (৬) ও আব্দুল্লাহ (৪)। শ্বশুরবাড়িতে থেকে বাকতা মাজমতলী গ্রামে সরকার অটো রাইস মিলে ( চালকল) শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। একই মিলে শ্রমিকদের রান্নাবান্নার কাজ করেন তাঁর শাশুড়ি মালেকা বেগম।
জানাগেছে, গত ২৯ মার্চ রাতে চালকলে কাজ করতে গিয়ে বেতন-বোনাসের দাবিতে মালিক পক্ষের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন সামিউল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চালকল মালিক আবুল কালাম সরকারের ছোট ছেলে শরিফ মিয়া এবং তার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন কর্মচারী নিয়ে সামিউলকে গুদামঘরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে। রড দিয়ে পিটিয়ে পা ও কোমর ভেঙে ফেলে। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পরদিন সকালে মালেকা বেগমকে তাঁর মেয়ের জামাইকে ড্রায়ার মিল(চালকল) থেকে নিয়ে যেতে বলা হয়। শাশুড়ি ও দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী সাথী আক্তার চালকলে গেলে তাদের উপস্থিতিতেও রড দিয়ে সামিউলকে পেটাতে থাকে অভিযুক্তরা। স্ত্রী-সন্তানদের আকুতিতে সকালে তাঁর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলে শরিফ মিয়া। ওইদিন গুরুতর অবস্থায় সামিউলকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আঘাত এতটাই ভয়ংকর ছিল যে ভর্তির পর তাঁকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে পারেনি তাঁর পরিবার।নির্যাতনের ঘটনায় ৩ এপ্রিল ফুলবাড়িয়া থানায় মামলা করেন সাথী আক্তার। এতে শরিফ মিয়া, এনামুল হকসহ চারজনকে নামীয় এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
সাথী আক্তার বলেন, ‘বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে তর্কবিতর্ক করায় আমার স্বামীকে নির্যাতন করে শরিফ ও তার লোকজন। চোখের সামনে রড দিয়ে পিটিয়ে কোমর, পা ভেঙে ফেলে। রড গরম করে ছ্যাঁকা দেয় দুই পায়ে। বুকের ওপর গরম চালের বস্তা রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় সাথী আক্তার বলেন, ‘বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে তর্কবিতর্ক করায় আমার স্বামীকে নির্যাতন করে শরিফ ও তার লোকজন। চোখের সামনে রড দিয়ে পিটিয়ে কোমর, পা ভেঙে ফেলে। রড গরম করে ছ্যাঁকা দেয় দুই পায়ে। বুকের ওপর গরম চালের বস্তা রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় মিলের মালিক আবুল কালাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন নিহতের মামা শশুর আকন্দপাড়া গ্রামের চান মাহমুদ ফকির।ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. রাশেদুজ্জামান জানান, নির্যাতনের শিকার ড্রায়ার মিলের শ্রমিক সামিউল হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ঘটনায় মিলের ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।