Mymensingh Bd News24
পুলিশ মানেই হয়রানি এমন একটা ধারণা জনমনে গেঁথে আছে ব্রিটিশ আমল থেকে, পাকিস্তান আমলে তা আরও বদ্ধমূল হয়। ফলে অধিকাংশ নাগরিক পুলিশ কিংবা থানার সেবা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা রেঞ্জের আওতাভুক্ত ১৩ জেলার ৯৬ মসজিদে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবার আগে পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
সেই বক্তব্যে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, পুলিশ কিংবা থানার কোনো সেবা নিতে অর্থের প্রয়োজন নেইG দেশের নাগরিক হিসেবে জিডি (সাধারণ ডায়েরি), মামলা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ নানাবিধ সেবা বিনামূল্যেই নিতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
গত ১ মার্চ ঢাকা রেঞ্জ অফিস থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপর ৫ মার্চ থেকে চলছে মসজিদভিত্তিক এ কার্যক্রম। মসজিদভিত্তিক এ প্রচারণায় জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আর সামাজিক অবক্ষয়ের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মসজিদে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, মসজিদ একটি পবিত্র জায়গা, এখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়। মসজিদে যে যোগাযোগ তৈরি হয় সেটাতে বিশ্বাস এবং আস্থা থাকে। আর সমাজে সেই যোগাযোগের প্রভাবও হয় ইতিবাচক।
ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান আরও বলেন, জনগণকে নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা আছে কি না, সমস্যা থাকলে সেটা কীভাবে সমাধান করা যায়, আইনগত সমাধানও রয়েছে আবার অনেক কিছুই রয়েছে সামাজিক সমাধান করা সম্ভব।
তো তারই একটা অংশ হিসেবে আমরা প্রতি মসজিদেই শুধু নয়; মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা যেখানে যেটি আছে সেখানে, যেখানে বেশি মানুষকে একসঙ্গে পাওয়া যায়, সব ধরনের মানুষকে একসঙ্গে পাওয়া যায়, সেখানে গিয়ে পুলিশ সচেতনতামূলক বক্তব্য দিচ্ছে।
পুলিশ যেভাবে কাজটি করতে চায় পুলিশ যেভাবে কাজটি করছে
এবং জনগণের প্রকৃত সাড়া পাওয়ার জন্য জনগণের কাছ থেকেও পুলিশ যে সহযোগিতা প্রত্যাশা করে, সেটি যেন প্রপারলি তারা পেতে পারে এবং জনগণের কাছেও যেন পুলিশ সম্পর্কে ধারণাটি স্বচ্ছ থাকে সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা এরকম বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বা অন্য যে কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে পুলিশের সদস্যরা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এই মসজিদে সপ্তাহে জুমার নামাজ পড়তে আসে সমাজের লোক। সবার সঙ্গে দেখা হয়। আমরা যদি মসজিদ থেকে শুরু করি, এটা একটা প্রতিষ্ঠান, তারা বাড়িতে গিয়ে বলবে, ফ্যামিলিতে গিয়ে বলবে। পুলিশের এ মসজিদভিত্তিক কার্যক্রমকে সাধারণ মানুষ কীভাবে মূল্যায়ন করছে সে বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যারা মসজিদে অফিসার ইনচার্জের বক্তব্য শুনেছেন।
তারা বলেন, আমাদের সামনে আজকে থানার কর্মকর্তা মাদক, জুয়া, ইভ টিজিং সম্পর্কে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে বলে মনে করি। তার সঙ্গে থাকা মসজিদের একজন মুসল্লি জানান, সন্ত্রাস চাঁদাবাজ মাদক ইভ টিজিং প্রসঙ্গে ওসি সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা আশা করি এভাবে যদি প্রতিটি মসজিদে আমাদের অফিসার ইনচার্জরা একটু সময় দেন তাহলে এদেশে সন্ত্রাস থাকবে না, ইভ টিজিং থাকবে না, মাদক থাকতে পারে না।
সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পুলিশের সেবা দেওয়া, নাগরিকদের সেবা গ্রহণ, পুলিশি হয়রানি-নিপীড়ন বন্ধ স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং এসব প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার জন্য গত বছর ডিসেম্বর থেকে ঢাকা রেঞ্জের উদ্যোগে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা থানার কার্যক্রম মনিটরিং করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে ১৩ জেলার ৯৬ থানা পর্যবেক্ষণে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ কার্যালয়ে। ২৪ ঘণ্টা একযোগে এক মনিটরে সব থানা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বিচ্যুতি বা অনিয়ম করলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। সরেজমিনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন একজন সেবাপ্রত্যাশী।
>ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়
ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ডিউটি অফিসারের তৎপরতা পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত একটি দল। এভাবেই রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানার কার্যক্রম রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের একটি মনিটরে পর্যবেক্ষণ চলছে। সেন্ট্রি, ডিউটি অফিসার ও হাজতখানার কর্মকান্ড তদারকিতে প্রতিটি থানায় তিনটি করে মোট ২৮৮টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যেগুলো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আশপাশের দৃশ্যও দেখা যায়।
ডিআইজি কার্যালয়ের এমন সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমের প্রতি সাধারণ মানুষের মনে পুলিশিভীতি দূর হবে। পাশাপাশি উজ্জ্বল হবে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর এ সংকটকালে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী তাদের নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা দিয়ে যেভাবে সাধারণ মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে তা সব শ্রেণির মানুষের কাছেই প্রশংসিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ আধুনিক এক বাহিনীতে রূপান্তর লাভ করুক এ প্রত্যাশা সবার।